মাইক্রোগ্রীন || ঘরের কোনে চাষ
ভূমিকা
চারিদিকে সবুজায়নের ধ্বংসে মেতে উঠেছে আধুনিক মানবসভ্যতা। চারিদিকে খালি আধুনিকতার নামে সবুজ ধ্বংসের প্রতিযোগিতা। ফলমূল শাকসবজি তে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যাবহার। ফলে খাবার পেট টাটকা সবুজ শাকসবজি হয়ে উঠছে বিভিন্ন রোগভোগের কারণ। আবার শাকসবজি না হলেও চলেনা। এক্ষেত্রে আমরা কি কিছু নিজ উদ্যোগে করতে পারি? হ্যাঁ বন্ধুরা পারি তো অবশ্যই বাড়িতে বাগান তৈরি করতে পারি। আচ্ছা একটা ব্যাপার তো আমরা সবাই জানি যে, বাগান করতে তো কিছুটা জায়গা জমি এবং হাতে সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু যদি এমন কিছু করা যায় যেখানে জায়গাজমি অর্থাৎ বলা ভালো বাড়িতে বাগান করার মত পর্যাপ্ত মাটি নেই, ঘরের মধ্যেই যদি অল্প কিছু সবুজ ফলানো যায়। হ্যাঁ বন্ধুরা তা সম্ভব। এক্কেবারে সম্ভব। কি করে সম্ভব তা নিয়েই আমরা নিচে আলোচনা করবো। মিক্রোগ্রিনের লাভ
 |
মাইক্রোগ্ৰীন, বিজ্ঞানের এক উন্নত চাষ পদ্ধতি |
ধারণা উদ্ভাবনের কারণ
মাটি, জায়গাজমি এসবের বিকল্প ভাবনা রয়েছে যা হলো মাইক্রোগ্রীন অনেকে আবার একে বেবিগ্রীনও বলে। মাইক্রো ক্ষুদ্র বা ছোট ছোট রঙিন অর্থাৎ সবুজ মানে ছোট ছোট সবুজ যারা আকাশ সাধারণত মাটির অভাবে মাটির বিকল্প হিসেবে এই মাইক্রো গ্রিনের পাবনার উদ্ভাবনা চাষবাস সবুজ শাকসবজি ফলাতে মাটির প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু বড় বড় শহরগুলিতে জায়গা জমি মাটির যথেষ্ট অভাব সেই ভাবনাতেই মিইক্রোগ্রীনের জন্ম।
মাইক্রোগ্রেইন হ'ল উদ্ভিজ্জ শাক এবং কটিলেডন পাতার বিকাশের ঠিক পরে কাটা কাটা শাক। এই পদ্ধতিতে মাটির বিকল্প হিসাবে নারকেল ছোবড়ার গুঁড়ো যাকে ইংরেজিতে বলে কোকো পিট ব্যবহার করা হয়। এখানে কোকোপিটের সাথে সাথে ঝুরঝুরে মাটি বা তুলো এসবের ব্যবহার করা যেতে পারে। ওই যে মাটির বাক কভের কোকোপিটের উপরে ভালো করে খানিকটা জল দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে নিতে হবে।
 |
মাইক্রোগ্রীন ঘরের কোনে চাষ |
আপনার বাড়িতে করতে হলে
আপনি যদি আপনার বাড়ির একটুখানি জায়গায় বিজ্ঞানের এই উন্নত পদ্ধতিতে সাহায্যে ছোট ছোট ডালপালা সহ চারাগাছ করতে চান, তবে আপনার প্রয়োজন হবে ছোট বা মাঝারি আকারের প্লাস্টিকের বাটি ওই জাতীয় জিনিস। এরপর সেই বাটির নিচে টবের মত করে ফুটো করে নিতে হবে। তারপর ওই মাটির বিকল্প হিসেবে নারকেল ছোবড়ার গুড়ো বা কোকোপিট ইত্যাদি ভালো করে বাটিতে ছড়িয়ে দিতে হবে মাটির মতো করে। তারপর আপনি যেই খাদ্যশস্য ফলাতে চান যেমন ধনে মূল্য মোটর অর্থাৎ ছোলা জাতীয় কীছু জিনিস। তবে সে ক্ষেত্রে কোন এক প্রকারের বীজ বাবা টির মধ্যে প্রায় ৮ থেকে ২৪ ঘণ্টা খাদ্যশস্যের প্রয়োজন অনুযায়ী) ঘন্টা ভিজিয়ে আপনার তৈরি করা কোকো পিঠের ওপরে ছড়িয়ে দিতে হবে। তারপর খানিকটা জল দিয়ে দিলে আপনার কাজ শেষ। এরপর আপনার বীজ কোকোপিট সহ পাত্রটি সূর্যের আলোয় রাখুন (সূর্যের আলোয়, না অন্ধকারে রাখা তা সেই বীজের উপর নির্ভর করবে, সুতরাং বীজ যেখান থেকে নিলেন তার থেকে জেনে নিবেন)। দিন দুয়েক বা কিছু ক্ষেত্রে বড়জোর ৫ দিনের মধ্যেই অঙ্কুরোদগম হবে। মোটামুটি পাঁচদিন পরেই বা সপ্তাহ পরে গাছের কান্ড অংশটা বেশ কয়েক ইঞ্চি বেড়ে যাবে এর সাথে সাথে দু'চারটে পাতাও দেখা যাবে মোটামুটি ১০ থেকে ১২ দিন হয়ে গেলে পাতাসহ চিকন ডালগুলো আরো কয়েক ইঞ্চি বেড়ে যাবে। ব্যাস আর অপেক্ষা কিসের! মাটির থেকে একটু উচ্চতা সহকারে ডালগুলো দিন কেটে, আর খেয় নিন সবুজ ভরা মাইক্রোগ্রীন।
 |
মাইক্রোগ্ৰীন ফার্মিং |
কখন কাটবেন
মাইক্রোগ্রেনগুলি মাটি বা মাটির মতো উপকরণ যেমন পিট শ্যাশগুলিতে জন্মে। মাইক্রোগ্রেনগুলির জন্য উচ্চ আলোর মাত্রা, কম আর্দ্রতা এবং ভাল বায়ু সংবহন সহ প্রাকৃতিক সূর্যালোক প্রয়োজন। মাইক্রোগ্রেনগুলি পদ্ধতিতে বীজগুলো স্প্রাউট পদ্ধতির তুলনায় খুব কম ঘনত্বের সাথে রোপণ করা হয়। বেশিরভাগ জাতের ফসলের সময় সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহ লাগে, যদিও কিছুক্ষেত্রে তা চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। পাতাগুলি পুরোপুরি প্রসারিত হলে মাইক্রোগ্রেনগুলি ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত। ফসল কাটা সাধারণত কোনও শিকড় বাদ দিয়ে মাটির পৃষ্ঠের ঠিক উপরে কাঁচি দিয়ে কাটা হয়।
বেশিরভাগ মাইক্রোগ্রেনের জন্য গড় ফসলের সময় বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত ১০ থেকে ১৪ দিন হয়।
মাইক্রোগ্রীনের সূচনা
মাইক্রোগ্রীনরা ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে সান ফ্রান্সিসকোতে শেফদের মেনুতে নজর কাড়ছিল। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়, মাইক্রোগ্রেনগুলি প্রায় ৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বহুতল বাড়ির ব্যালকনিতে জায়গা করে নেওয়া শুরু করে। সেইসময় প্রাথমিকভাবে কয়েকটি জাত সরবরাহ করা হয়েছিল; যেগুলি উপলভ্য ছিল সেগুলি হলেন: আরুগুলা, তুলসী, বিট, কেল, সিলান্ট্রো এবং "রেইনবো মিক্স" নামে একটি বর্ণিল মিশ্রণ। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পূর্ব দিকে মাইক্রোগ্রীনের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পরে, তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ অঞ্চলে জন্মে এবং বিভিন্ন ধরণের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক জাত উপলব্ধ রয়েছে। আজ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে মাইক্রোগ্রেনের বিভিন্ন শিল্পে বিভিন্ন বীজ সংস্থা এবং উৎপাদক রয়েছে।
 |
ছোট প্লাস্টিকের বাটি বা সমজাতীয় কোনো পাত্রতেও করে নিতে পারেন |
মাইক্রোগ্রীনের পুষ্টি প্রয়োজনীয়তা
২০১২ সালে মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির খাদ্য ও পুষ্টি দপ্তর মাইক্রো ক্লিনের পুষ্টিমূল্য নিয়ে গবেষণা করেছিল গবেষকদের মতে মাইক্রো গ্রীন পরিণত শাকসবজির তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টি বর্তমান রয়েছে। টেক্সাসের হর্টিকালচার এন্ড ভেজিটেবল এন্ড ফ্রুট ইমপ্রুভমেন্ট সেন্টারে কাজ করা অধ্যাপক ভীমু পাটিল এর পুষ্টিগুণ মেনে নিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন যে মাইক্রো গ্রিনের বিষয়ে আরো গবেষণা করার প্রয়োজন। মাইক্রো গ্রীনের পরিবেশ মান, কোকোপিট এর প্রকৃতি, সময়কাল ইত্যাদি নিয়ে আরো বেশি করে গবেষণার দরকার বলে তার অভিমত। পরীক্ষিত ২৫ টি মাইক্রোগ্রেনের মধ্যে লাল বাঁধাকপি, সিলান্ট্রো, গারনেট আম্রান্থ এবং গ্রিন ডাইকন মুলায় যথাক্রমে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন ই এর ঘনত্ব ছিল। সাধারণভাবে, মাইক্রোগ্রেনগুলিতে ভিটামিন এবং ক্যারোটিনয়েডগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ধারণ করে।
সতর্কতা
তবে সব ধরনের মাইক্রো গ্রীনই যে খাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। উদাহরণস্বরূপ, নাইটশেড গাছগুলি (বেগুন, টমেটো, আলু ইত্যাদি) মাইক্রোগ্রিন স্প্রাউট হিসাবে জন্ম দেওয়া উচিত নয়, যেহেতু নাইটশেড স্প্রাউটগুলি বিষাক্ত।
 |
মাটির থেকে কিছুটা দূরত্বে কেটে নিন সদ্য গজানো কচি ডালগুলো |
সমুদ্রের নীল রঙ হবে এবার সবুজ
শেষের কথা
আমরা বন্ধুরা বুঝতে পারলাম মাইক্রো গ্রীন পুষ্টির এক অনন্ত দিগন্ত এবং বিজ্ঞানের উন্নত পদ্ধতি। যার সাহায্যে আমরা আমাদের ঘরের কোনে একটুখানি জায়গাতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। আপনি আপনার বাড়িতে এবং আমি আমার বাড়িতে মাইক্রো গ্রীন করে সাফল্য লাভ করলেই এর প্রতি আমাদের অধিক নির্ভরশীল হওয়া যাবে না, কারণ আমাদের দৈনন্দিন খাবারের প্রয়োজনের খুব সামান্যই এতে মিটবে। প মাইক্রো গ্রীন সাধারণত আমরা দিনে দু তিনবার বাটিতে করে কিংবা ভাত খাওয়ার সময় বা রুটি খাওয়ার সময় স্যালাড হিসেবে একে খেতে পারি। মাইক্রো গ্রীন বাড়িতে করলেও আমরা আমাদের দৃষ্টি চারপাশের থেকে সরিয়ে নিয়ে মাইক্রো গ্রীনের মধ্যে আবদ্ধ করলে চলবে না। চারিদিকে সবুজায়নের ধ্বংস, গাছ কাটার উল্লাস এবং শস্য জমি ভরাট করে বহুতল বাড়ি ফ্ল্যাট এসব করা কে কখনোই সমর্থন করা যায় না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
DEAR READERS, ANY SUGGETION FOR THIS BLOG AND ANY KIND OF POST, PLEASE COMMENT. BECAUSE YOUR VALUABLE COMMENT WILL BE TAKEN HAPPILY. IF YOU HAVE ANY DOUBT PLEASE LET ME KNOW.