ফরেস্টম্যান অফ ইন্ডিয়া যাদব মুলাই পায়েং
ফরেস্টম্যান অফ ইন্ডিয়া যাদভ মুলাই পায়েং
জাধব মুলাই পায়েং নামটির সাথে আপনারা কতোটা সুপরিচিত? তাকে বলা হয় 'ফরেস্টম্যান অফ ইন্ডিয়া।' তিনি নিঃস্বার্থভাবে আমাদের জন্য, প্রকৃতির জন্য, বন্য প্রানীদের জন্য, সমাজের জন্য যা করে দেখিয়েছে তা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। ইনি 'মনুষ্যসৃষ্ট বন' তৈরি করেছেন। আজ্ঞে হ্যাঁ বন্ধুরা আপনি ঠিক পড়েছেন 'মনুষ্যসৃষ্ট বন।' ইনি ১৩৬০ একর জুড়ে বন তৈরি করে শ্রদ্ধেয় \ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের দ্বারা 'ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া' উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ভাবুন তো একবার একখানা বন তাও কিনা একার হাতে। অরণ্য মানব যাদব পায়েং
![]() |
যাদভ মুলাই পায়েং |
পড়ুন নিশ্চই অবাক হবেন মৌমাছি, মৌমাছির উপকারিতা, মৌমাছির অবদান
ঘটনার সূত্রপাত
কাহিনীর সূত্রপাত ছোটবেলা থেকে। তিনি আসামের মিসিং ট্রাইব অঞ্চলে থাকতেন। আসামের জোড়হাটে মাজুলি দ্বীপের এক বড়ো অংশ প্রতিবছর ব্রম্মপুত্রের নদের বানে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। মাজুলী দ্বীপ এর একটা বড়ো অংশ ধ্বংসের মুখে পড়ত, প্রচুর গাছপালা জীবজন্তুর প্রাণহানি ঘটত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এরকম চলতে থাকলে মাজুলি দ্বীপের অস্তিত্ব আর থাকবে না। এই ঘটনাই কিশোরে বয়সে যাদভ মুলাইয়ের মনে দাগ কেটেছিল। সেই সময় থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।![]() |
ফরেস্টম্যান অফ ইন্ডিয়া যাদব মুলাই পায়েং |
প্রকৃতির আশ্চর্য রঙ পরিবর্তনকারী পাখি, সুড়াকাভ পাখি
গাছ লাগানোর সূচনা
তিনি শুরু করলেন বৃক্ষরোপণ কিশোর বয়স থেকেই। তিনি প্রথম ২০ খানা বাঁশের গাছের চারা লাগালেন। মজুলী দ্বীপের অস্তিত্ব সংকটের ঘটনা স্থানীয় বন্দপ্তরের নজরে পড়ে। এই লড়াইয়ের জন্য, ১৯৮০ সালে, গোলাঘাট জেলার আসাম বনাঞ্চল বিভাগ ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতটে ২০০ হেক্টর জমিতে বনসৃজনের সিদ্ধান্ত নিলেন মোলাই পায়েং সেই সরকারি প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করলেন। পাঁচ বছর ধরে বনসৃজনের কাজ চলল। মোলাই পায়েং-এর মত অন্যান্য শ্রমিকরা যারা সেই সরকারী বনসৃজন প্রকল্প কাজ করছিলেন পাঁচ বছর শেষে তারা যখন যখন চলে গেলেন, তিনি কোথাও গেলেন না। যেই গাছগুলো লাগানো হয়েছিল তাদের দেখভাল করলেন এবং তিনি বৃক্ষরোপণ শুরু করলেন। কিছু সময় পরে তিনি মাজুলি দ্বীপে চলে আসলেন সেখানে তিনি তার পরিবার কে নিয়ে বসবাস শুরু করলেন।তিনি বিগত ৩৫ বছরে কোনোরকম খ্যাতিলাভের আসা ছাড়াই গাছ লাগাতে থাকলেন। তিনি প্রতিদিন ভোর ৩ -৩০ সময়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে নৌকো ধরে আধঘন্টার নদীপথ পেরিয়ে ডাঙ্গায় উঠে আবার ১ ঘণ্টার হাটাপথ পেরিয়ে গাছ লাগাতেন। তিনি ৩৫ বছর ধরে একই কাজ করলেন। একবার ভাবুনতো বন্ধু ৩৫ বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে কোন খ্যাতিলাভের আশা ছাড়াই লাগাতার এই কাজ! ভাবতেই অবাক লাগে।
চলুন দেখে নিই হাতির সম্পর্কে মজাদার ও আশ্চর্যজনক ২৫টি তথ্য
তিনি মনে করেন তার বড়ো করা গাছ গাছালি, জীব জন্ত, পশুপাখি সবই তার ছেলে মেয়ে। তার এই মহৎ কাজে র জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর দ্বারা "পদ্মশ্রী" পুরস্কারে সম্মানিত হন।
![]() |
যাদব মুলাই পায়েং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী দ্বারা পদশ্রী উপাধিতে ভূষিত হচ্ছেন |
এক অন্যধরণের বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী গুবরে পোকা
এই গাছ লাগানোর উদ্যোগে তিনিও সমস্যায় পড়েছিলেন। বিশেষ করে চারা গুলি যখন বৃক্ষে পরিণত হয়েছিল, সে সময় মাফিয়াদের দৌরাত্ব বেড়েছিল সে মাফিয়ারা তার জঙ্গলে গাছ কাটতে আসত। তিনি তাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন এবং বন দপ্তরের সহায়তা চেয়েছিলেন এবং পেয়েওছিলেন। শুধু তাই না বেশ কিছু চোরাকারবারি, পাচারকারীর দল জঙ্গলের জীবজন্তুদের মারতে আসতো। তিনি তাদের বিরুদ্ধেও লড়েছিলেন। আসলে যাধব পায়েং এর মত লোকেরা সরল সাধারণ, এদের বুদ্ধিজীবী বলা ঠিক হবে না। কিন্তু ওনাদের মত লোকেদের চেতনার মান যে আপনার আমার থেকে অনেক উন্নত তা বলাই বাহুল্য।
![]() |
যাদভ মুলাই পায়েং শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম দ্বারা সম্মানিত হচ্ছেন |
তার এই কর্মকাণ্ডের যাত্রাপথে তার পরিবারের ভূমিকাকে ছোট করে দেখা উচিত না। যাদব পায়েং এর দুই ছেলে এক মেয়ে এবং তার স্ত্রী নিয়ে ৫ জনের পরিবার। যাদভ পায়েং এর ছেলেমেয়েরা গাছ লাগানোর ব্যাপারে তার বাবাকে সাহায্য করেছেন। যাদব পায়েং এর বেশ কয়েক খানা মহিষ ছিল তিনি তাদের দুধ বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাঝেমধ্যে জঙ্গলের বাঘ মহিষদের খেয়ে নিত। তিনি এ ব্যাপারে বাঘেদের দোষ দেখেননি। দোষারোপ করেছেন সভ্য সমাজের প্রতি যারা গাছ কেটে বনজঙ্গল ধ্বংস করে বাঘেদের মত পশুদের জীবনধারায় থাবা বসিয়েছে, খাদ্যের অভাব সৃষ্টি করেছে, বন্যদের মেরেছে।
![]() |
ফরেস্টম্যান যাদভ মুলাই পায়েং ও তার স্ত্রী |
আর এক বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী উইপোকা
যাদভ মুলাই পায়েং বলেন গাছ লাগানোর এই শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই স্কুলগুলিতে শেখানো উচিত। শুধু বইয়ে পরলেই হবে না তাদের হাতে কলমে প্রাক্টিক্যালি কাজ করতে হবে। ছাড়া রোপণ করতে হবে, এদের যত্ন নিতে হবে, বড়ো করে তুলতে হবে। অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত এই মানুষটি পুরষ্কার চান না, তিনি চান তার এই কাজে মানুষ সামিল হোক, মানুষেরা নিজেদের মতো করে শুরু করুক। কিন্তু তার আক্ষেপ যতটা তাকে নিয়ে আলোচনা হয় তার কাজকে নিয়ে কথা হয় কিন্তু সেই উদ্যোগ তিনি মানুষের মধ্যে দেখতে পান না।
আসলে যাদব মুলাই পায়েং এর মতো মানুষগুলির আজ বড্ডো বড্ডো প্রয়োজন আমাদের এই সমাজে। এই ধরনের মানুষগুলির কাহিনী বলতে ভালো লাগে, শুনতে ভালো লাগে, পড়তে ভালো লাগে আর এদের কর্মকাণ্ডের যদি এক শতাংশও আমরা করবার ক্ষমতা রাখি তবে আমাদের জীবন ধন্য।
তথ্যগুলি ইন্টারনেট এবং ম্যাগাজিন দ্বারা সংগৃহিত
সমস্ত ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
তথ্যগুলি ইন্টারনেট এবং ম্যাগাজিন দ্বারা সংগৃহিত
সমস্ত ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
DEAR READERS, ANY SUGGETION FOR THIS BLOG AND ANY KIND OF POST, PLEASE COMMENT. BECAUSE YOUR VALUABLE COMMENT WILL BE TAKEN HAPPILY. IF YOU HAVE ANY DOUBT PLEASE LET ME KNOW.