মৌমাছি, মৌমাছির উপকারিতা
মৌমাছি, মৌমাছির উপকারিতা,
"মৌমাছি মৌমাছিকোথা যাও নাচি নাচি
দাঁড়াও না একবার ভাই
ওই ফুল ফুটে বনে,
যাই মধু আহরণে,
দাঁড়াবার সময় তো নাই"
আমরা সবাই উপরের কবিতাটির সাথে সুপরিচিত। আমরা সবাই পরিচিত মৌমাছি মৌচাক এবং মধুর সাথে। মৌমাছি শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে একটা কালো হলুদ মিশ্রিত একখানা পতঙ্গ, যার পাখা আছে, উড়তে পারে। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে মৌমাছি মানেই মৌচাক, মৌচাক মানেই মধু। একদল পতঙ্গ যারা গুঞ্জন সৃষ্টি করে, অনেকটা মশার দলের মত এবং আরেকটি ব্যাপার হলো ব্যাপার হল এদের হুল যদি একবার ফোটে, তার তৎক্ষণাৎ একটা তীব্র ব্যাথা, পরে কিছুটা ব্যাথা থাকলেও মোটামুটি কমকরে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে।
![]() |
মৌমাছি |
কিন্তু আপনি শুনলে অবাক হবেন যে মৌমাছির অবদান শুধু মধু তৈরিতে নয় মৌমাছি মানুষ সহ প্রকৃতি তে এক বিশাল অবদান রাখে। মৌমাছি না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব আদৌ থাকতো কিনা, বলা ভালো মৌমাছিদের অবর্তমানে আমাদের অস্তিত্ব সংকটে পরে যেত এই বিষয়ে গবেষকরা একমত। তাহলে চলুন তাহলে আমরা জেনে নিই মৌমাছিদের আমাদের প্রতি অবদানের এই কাহিনী। মৌমাছি শুধুমাত্র মধু তৈরিতেই আমাদের এবং প্রকৃতির প্রতি অবদান রাখে না। এর অবদানের ব্যাপ্তি আরো বিশাল। যেমন
১)পরাগযোগ
২)মধু,
৩) মধু পণ্য
৪)মোম,
৫)মোম পণ্য
৬) ফসল উৎপাদনে ক্ষেত্রে
৭) সরাসরি পরিবেশের ক্ষেত্রে
৮) Beeswax বা মৌমাছির শরীর নিঃসৃত এক ধরণের প্রাকৃতিক মোম যা মানুষের দৈনন্দিন
জীবনের ব্যাবহৃত কাজের জিনিসের গঠনের ক্ষেত্রে অতিআবশ্যক উপাদান।
আজ আমরা সর্বপ্রথম মধু এবং মধু পণ্যের বিষয়ে আলোচনা করবো। তবে তার আগে আমাকে একথা বলতেই হবে যে উপরে লেখা মৌমাছির অবদান গুলোর গুরুত্ব আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় কতখানি ভূমিকা পালন করে, তা আমরা উপরে লেখা একটা শব্দের দ্বারা উপলব্ধি করতে পারবো না। সেক্ষেত্রে আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা সময় করে বাকি অবদান গুলোর বিষয়ে পড়ে নেবেন।
![]() |
মৌমাছিরা ,মধু তৈরিতে ব্যাস্ত |
মধু, মধুর উপকারিতা
উপরে উল্লিখিত হিসাবে, মৌমাছি একমাত্র পতঙ্গ যা মধু তৈরি করতে পারে। মধুতে🍯 রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বৈশিষ্ট্য এবং মধুই হলো একমাত্র পোকার তৈরি উপাদান যা স্বাস্থ্যকর জীবন বজায় রাখার জন্য সমস্ত বৈশিষ্ট্যযুক্ত! বুঝুন তাহলে মধুতে এমন কিছু আমাদের জানা অজানা উপকারী উপাদান রয়েছে যা একজন মানুষের স্বাস্থ্যকর, সৌন্দর্যময় জীবনে অপরিহার্য।হল পৃথিবীতে একমাত্র খাদ্য যা কখনও পচে না।
![]() |
মধু |
প্রাকৃতিক মধু এবং বাজারি মধু বা প্রক্রিয়াজাত মধু
এবার আমাদের মনে আসতেই পারে যদি মৌচাক এর থেকে মধু সংগ্রহ করতে না পারি। অর্থাৎ আমরা বাজার থেকে বা অনলাইন থেকে যে মধু কিনব সেই মধুতে যদি প্রাকৃতিক মধুর কোন উপাদান না থাকে? সেক্ষেত্রে তো বিভিন্ন কম্পানি বানিজ্যিক ভিত্তিতে কৃত্রিম মধু বানায় অর্থাৎ যে মধু প্রাকৃতিক না। প্রাকৃতিক না তাহলে সেই মধ্যেও তো একই কাজ হওয়ার কথা। ঠিক এই কারণেই বন্ধু কাঁচা মধু এবং প্রক্রিয়াজাত মধুর(যা বিভিন্ন কোম্পানি গুলি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বানায়) মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিয়াজাত মধু বড় বড় খাদ্য সংস্থাগুলি তৈরি করে যা মৌমাছির পরাগ আহরণ করে। প্রক্রিয়াজাত মধু ভাল স্বাদের হতে পারে, কিন্তু কাঁচা মধু আরও ভাল, কারণ এটিতে রয়েছে পুষ্টিকর পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রকৃতপক্ষে, প্রক্রিয়াযাত মধুতে অস্বাস্থ্যকর পরিমাণযুক্ত উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ থাকে, যা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক। এর ফলে মানুষের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। অস্বাস্থ্যকর অবস্থার মধ্যে স্থূলতা, যকৃতের ক্ষতি, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।![]() |
স্বাস্থ এবং প্রসাধনীতে ব্যাবহৃত মধু |
বিজ্ঞানী গুবরে পোকা
বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যে মধুর ব্যাবহার
অনেকগুলি খাবার এবং পানীয়তে মধু অতি আবশ্যক উপাদান হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। এ তো গেল কিছু খাবার কিছু পানীয়তে মধুর উপাদান যেখানে মধু উপাদান হিসাবে কিছুটা পরিমাণে থাকে। কিন্তু মূল উপাদান হিসেবে মধু কোন ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যায় তা আমরা সবাই জানি। স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বিষয়ক ক্ষেত্রে। বলা ভালো স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বিষয়ক প্রোডাক্ট গুলিতে মধু মূল উপাদান হিসেবে অধিকার করে থাকে। কয়েক শতাব্দী আগে, যখন বিউটি প্রডাক্টস বা সৌন্দর্যের পণ্যগুলো বাজার দখল করেনি সেই সময় আমরা কেবল পুষ্টির চেয়ে মধুর ব্যবহার শুরু করেছি। আমরা বুঝতে শুরু করি যে মধুর নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মধু কয়েকশ বছর ধরে ফেসিয়াল রিভাইলেটাইজার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ত্বক পরিষ্কার এবং রিঙ্কেল নরম করে বলে বিশ্বাস করা হয়। যদিও এই দাবিগুলি সবসময় যে সঠিক হয় তা ঠিক না। মাঝেমধ্যেই বিউটি প্রুডাক্টসগুলি নিজেদের মধ্যে বাজার দখল করা জন্য মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিয়ে থাকে। তবে অনেকগুলি মধু-ভিত্তিক সৌন্দর্য পণ্য রয়েছে যা ব্যবহারকারীর পক্ষে উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে।অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান
এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে মধু শুধুমাত্র স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বিষয়ক ক্ষেত্রেই নিরাময়যোগ্য নয়। মধুর ব্যবহার কিছু অসুস্থতা থেকে লড়াই করার জন্য বা কিছু অসুস্থতার লক্ষণগুলি হ্রাস করার জন্য এর অনেক অবদান রয়েছে। মধু এবং বিসওয়াক্সে প্রোপাইলস নামে একটি উপজাত রয়েছে যা একটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট। এই এজেন্ট ব্যাকটিরিয়া এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে যা ক্ষতগুলির চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আরো একটি বিষয়ে মধুর ভূমিকার কথা না বললে নয় তা হল, শীতে আমাদের ঠান্ডা লেগে গেলে গলা ব্যথা, কাশি, সর্দি ইত্যাদির ক্ষেত্রে মধুর প্রচলন বহুদিনের।
![]() |
মৌমাছিরা ফুলের থেকে মধু তৈরি করছে |
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মধুর পরাগের ভূমিকা
আমরা সবাই জানি মধুতে পরাগের ভূমিকা। অল্প বয়সে মধুর সংস্পর্শে আসা বাচ্চাদের মধুতে পরাগের উপস্থিতির কারণে অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে, এই বিষয়েও গবেষকদের একাংশের সহমত পোষন করেছেন।মধু সেই জন্মলগ্ন থেকে আবাল বৃদ্ধ বনিতা মানুষের বিভিন্ন ধরনের উপকারে যে লেগে আসছে এই বিষয়কে আমরা অস্বীকার করতে পারব না। মধু তৈরিতে মৌমাছিদের 🐝 অক্লান্ত পরিশ্রম কে আমাদের কুর্নিশ জানাতেই হবে। কেনো বললাম ওদের পরিশ্রমের কথা আসুন তবে জেনে নিই। 🐝🐝🐝🐝
মৌমাছিদের নিঃস্বার্থভাবে অক্লান্ত কঠোর পরিশ্রম
অনেকেরই আজানা যে ৫০০ গ্রাম মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছির দরকার হয় ২ মিলিয়ন ফুল। ওই একই পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছির ৯০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এরা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮ কিলোমিটার উড়তে পারে। সারা জীবনে অর্ধেক চা চামচের সমপরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারে। একটা মৌচাকে গড়ে প্রায় ৬০ হাজার মৌমাছি থাকে। পুরো পৃথিবী একবার ঘুরে আসতে মৌমাছির জন্য ২ চা চামচ মধুই খাবার হিসেবে যথেষ্ট। এবং বন্ধু আপনি শুনলে অবাক হবেন যে, ১ চা চামচ মধু হচ্ছে ১২টি মৌমাছির সারাজীবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল যা আমরা এক ঢোকে শেষ করি।![]() |
মৌচাকে রানী মৌমাছিরা |
বিজ্ঞানী উইপোকা
মৌমাছিদের অস্তিত্ব সংকটে
দুর্ভাগ্যবশত, মৌমাছি প্রজাতির একটি বড় শতাংশ বিভিন্ন কারণে মারা যাচ্ছে। যেমন রোগ, পরজীবী, কীটনাশক এবং তাদের প্রধান খাদ্যের উৎসগুলোর প্রতি মানুষের মতো দেখতে একদল প্রাণীর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। তাদের খাদ্যের উপর সৃষ্টি করছি প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার কীটনাশক প্রকৃতির ব্যবহার করছি এবং কিছু ধূর্ত লোভী ব্যবসায়ীরা মৌমাছিদের মারার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। এবার বুঝুন মানুষের মতো দেখতে প্রাণী আছে যারা টাকা💰আর ক্ষমতা চেনে। নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাওয়া প্রকৃতির এই অদ্ভুত অথচ সুন্দর একটা প্রজাতির জীবকে মারার জন্য আমরা উঠে পড়ে লেগে গেছি। তবে আবার বলি এই পতঙ্গের অস্তিত্ব যদি পৃথিবীতে না থাকে তবে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে কিনা সন্দেহ।![]() |
আমাদেরও বাঁচতে দাও তথ্যগুলি ইন্টারনেট এবং ম্যাগাজিন দ্বারা সংগৃহিত সমস্ত ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত |
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
DEAR READERS, ANY SUGGETION FOR THIS BLOG AND ANY KIND OF POST, PLEASE COMMENT. BECAUSE YOUR VALUABLE COMMENT WILL BE TAKEN HAPPILY. IF YOU HAVE ANY DOUBT PLEASE LET ME KNOW.