হাতিদের দাঁত ছোট হয়ে যাচ্ছে, হাতির দাঁত শিকার
ভূমিকা
এক বিশাল দীর্ঘকায় শুঁড় ওয়ালা চার পা যুক্ত প্রাণী আপনার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে। আজ্ঞে হ্যাঁ বন্ধুরা ঠিক ধরেছেন আমি হাতির কথাই বলছি। এই মস্ত দীর্ঘকায় প্রাণীটিকে চোখের সামনে সামনাসামনি দেখাটা কিন্তু একটা উত্তেজনার সৃষ্টি করে। আর তা যদি হয় মস্ত দাঁত ওয়ালা দাঁতাল হাতি। তবে তো আর কথাই নেই। হাতিদের এই দাঁত ক্রমশ বড় হতেই থাকে। আফ্রিকান পুরুষ এবং মহিলা হাতির দাঁত থাকে কিন্তু এশিয়ান মহিলা হাতিদের দাঁত থাকেনা। কিন্তু ডাঙ্গার এই বৃহত্তম প্রাণীটির দাঁত নিয়ে পড়েছে মহা সমস্যায়, এদের দাঁত ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে।
 |
গজদন্ত |
হাতিদের দাঁত শিকার
আফ্রিকার মোজাম্বিকের গোরঙ্গোসা ন্যাশনাল পার্কের হাতিদের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা সাধারণত হাতি গুলিতে থাকে: হাতির দাঁত। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে শিকারের তীব্র উপস্থিতি এখানে হাতিগুলিকে বিনা দাঁতে বিকশিত করছে। পাচারকারীরা এবং শিকারিদের দ্বারা হাতিদের শিকার অর্থাৎ হাতির দাঁত শিকার করা এবং পাচার করা মূল লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফ্রিকার গোরঙ্গসা ন্যাশনাল পার্কের চিত্র
আফ্রিকার গোরঙ্গোসা ন্যাশনাল পার্কের হাতিদের নিয়ে অধ্যয়নরত গবেষক, লং হাতিদের দন্ত নিষ্ক্রিয়তা বা দাঁতের ছোট আকারের জন্য হাতির দাঁত শিকারকে দায়ী বলে জানান। তিনি বলেন হাতিদের দন্তহীনতা কোনো প্রাকৃতিক কারণে বা প্রাকৃতিক ভাবে ঘটেনি। এই ঘটনা একটি একটি কৃত্রিম ঘটনা যা মানব শিকারি বা পাচারকারী দ্বারা সংগঠিত হয়েছে।
হাতিদের দাঁত শিকারের ক্ষেত্রে তুলনামূলক ক্ষেত্রে মূল টার্গেট হয়ে দাড়ায় বড়ো দাঁতওয়ালা পুরুষ হাতিগুলো। কারণ তাদের লম্বা দাঁত। তিনি বলেন বড়ো দাঁতওয়ালা হাতিগুলো প্রথমেই শিকারের লক্ষ্যবস্তু হয় দাঁড়ায়, দাঁত না থাকার ফলে নির্দিষ্ট হাতিগুলোর বংশবিস্তার করতে অসুবিধা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে স্ত্রীর হাতির সাথে মিলনের জন্য পুরুষ হাতি গুলি যখন একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, যে লড়াই এ যেতে, স্ত্রী হাতির অনুমতিতে সে মিলনে সুযোগ পায়। কিন্তু ছোট দাঁতওয়ালা হাতিগুলো, অনেক সময় দাঁতওয়ালা হাতিদের হারিয়ে দিয়ে, স্ত্রী হাতিদের সাথে মিলনের সুযোগ করে নেয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় দাঁতবিহীন পুরুষ মাকনা হাতিগুলো স্ত্রীদের সাথে মিলন করে হাতির বাচ্চার জন্ম দিতে থাকে। এই ধরনের ঘটনার ফলে যে হস্তীশাবক গুলো জন্ম নেয় তারা হয় ছোট দাঁত ওয়ালা হাতি বা দাঁতবিহিন হাতি। কারণ মিলনের সময় বড় দাঁত ওয়ালা হাতির জিন এরা পায় না এবং বংশপরম্পরায় না থাকার ফলে এরাও ছোট দাঁতাল হাতি বা দাঁত বিহীন হাতির জন্ম দিতে থাকে। ক্রমশ এই ঘটনার ফলে দাঁত বিহীন হাতিদের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে এবং দ্বিগুণ হারে বাড়ছে।
 |
এশিয়ান হাতিগুলিরও দাঁতের ছোট আকার |
হাতি পিঁপড়া ও মৌমাছিকে ভয় পায়
গৃহযুদ্ধের সময়ে হাতিদের দাঁতের উপরে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি হয়
পাশাপাশি আরেকটা জিনিস গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে
১৯৭০ সালের মোজাম্বিকের গৃহযুদ্ধের সময় যেইসব বড় দাঁতাল হাতি ছিল তারা সৈন্যদের নজরে পড়ে এবং তাদের দাঁত শিকার করা হয় ও যুদ্ধের সময়ে সৈন্যদের তা খাওয়ানো হয়, পাশাপাশি তাদের দাঁত শিকার করে তা বেচে যুদ্ধের অস্ত্র সামগ্রী কেনা হত। এছাড়া পাচারকারী ও চোরাকারবারীদের ভয়ঙ্কর রকম হাতির দাঁতের প্রতি নেক দৃষ্টি ও ক্রমাগত শিকার ও হত্যার কারণে বড় দাঁতওয়ালা হাতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। গবেষকদের মতে আফ্রিকার যে নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলিতে চোরাকারবারী ও পাচারকারীদের মারাত্মক রকম ধ্বংসাত্মক প্রভাব লক্ষ করা গেছে সেই ধরনের এলাকাগুলিতে বড় দাঁত হাতির সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে।
উগান্ডার এলিজাবেথ পার্কের একই চিত্র
শুধুমাত্র আফ্রিকার মোজাম্বিক উগান্ডার এলিজাবেথ এর পার্কের তথ্য একই প্রমাণ দিচ্ছে। সেখানেও গবেষকরা হাতির দাঁত নিয়ে গবেষণা করে তাদের হাতে একই রকম চিত্র ধরা পড়েছে। গবেষকদের মতে হাজার ১৯৩০ সাল এর আশেপাশে দন্তহীন পুরুষ হাতির সংখ্যা ছিল ১% যেখানে বর্তমানে প্রায় ৯% পুরুষ হাতি। আবার জাম্বিয়ার লুয়াঙার অভয়ারণ্যের ১৬ বছরের সমীক্ষার ভিত্তিতে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে বলা হচ্ছে ৩৮ শতাংশ পুরুষ হাতির দাঁত নেই।
 |
হাতিদের মস্ত বড়ো দাঁত যা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে |
হাতির সম্পর্কে মজাদার ও আশ্চর্যজনক ২৫টি তথ্য
এশিয়ান হাতিদেরও একই অবস্থা
আর যদি এশিয়ান হাতি বা ভারতীয় হাতিদের কথা বলা যায় তবে তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একই যে হাতির দাঁত ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ছোট হয়ে যাচ্ছে। আমরা জেনেছি যে এশিয়ান পুরুষ হাতিগুলোর দাঁত থাকে কিন্তু মহিলা হাতিগুলোর দাঁত থাকে না। আসামের কাজিরাঙ্গা পার্কে বিশেষজ্ঞরা দেড় হাজার হাতির মধ্যে ১৩২ টি পুরুষ হাতির উপর প্রায় ৪০০০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ দেখে ওনারা বিবৃতি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে দাঁতের ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার ফলে ধীরে ধীরে তাদের দাঁতের আকার ছোট হয়ে আসছে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বিবর্তনের ফলে দৈহিক গড়ন অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে ছোট হয়ে গেছে কিন্তু তাদের দাঁতের দৈর্ঘ্য কমেনি। ফলে এই দাঁত নিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছে বৃহত্তম প্রাণীটি। ডাঙ্গার বৃহত্তম প্রাণীটির মাথার বিশালকায় ওজন, আমরা জানি যে হাতিদের শুধুমাত্র মস্তিষ্কের ওজনই প্রায় পাঁচ কেজি। অর্থাৎ মাথার ওজন এর পাশাপাশি দাঁতের ওজন ফলে এতটা ভার নিয়ে মাথায় তুলতে পারে না পুরুষ হাঁতি। যার ফলস্বরূপ তাদের খাবার সংগ্রহ অর্থাৎ গাছ গুঁড়িয়ে দেওয়া বা গাছ ফেলে দেওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর সেই কারণেই দাঁতের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে পুরুষ হাতির দল।
 |
হস্তিশাবকরা ছোট দাঁত নিয়ে জন্মাচ্ছে |
কেরলের পেরিয়ার জাতীয় উদ্যানেও একই অবস্থা
কেরলের পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান গবেষকরা হাতির উপর গবেষণা করে একই ফল হাতে পেয়েছেন সেখানকার আধিকারিক সহ গবেষকরা বলছেন যে
বর্তমানে লড়াইয়ের সময় বর্তমান পুরুষ হাতি দাঁতের চেয়ে পায়ের ব্যবহার বেশি করছে। আধিকারিকরা বলছেন যে দাঁতের ভারে ক্রমশ ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়ছে পুরুষ হাতে গুলি অর্থাৎ তাদের রিফ্লেক্স কমছে। এবং রিফ্লেক্স কম হয়ে পড়লে চটজলদি পেছনে ফেরা ফেরা কিংবা গাছের গুড়ি উপরে দেওয়া এবং লড়াই করতে অসুবিধের হয়। আধিকারিকদের মতামত অনুযায়ী
চটজলদি মাথা ঘোরাতে পারছেনা যার ফলে লড়াইয়ের সময় প্রতিপক্ষ মাকনা পুরুষদের কাছেও হারতে দেখা গিয়েছে দাঁতাল গুলির।
বাংলাদেশের মধুপুর গড় থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী এলাকায় একসময় হাতির অবাধ বিচরণ ছিল। বাসস্থান ধ্বংস, বন উজাড়, জনসংখ্যার চাপ, সংরক্ষণের অভাব, খাদ্যের অভাব ও চলাচলের পথে বাধার কারণে আমাদের দেশে হাতির অবস্থা সঙ্গিন।
বর্তমানে হাতি শুধু চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরহরিৎ বনে অল্প কিছু টিকে আছে। আইইউসিএন বাংলাদেশের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বন্য অবস্থায় হাতির সংখ্যা মাত্র ২৫০টি। বেশিরভাগ দেশেই হাতিদের এই অবস্থা। মানুষের উন্নয়নের অজুহাতে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা বন জঙ্গল ধ্বংস করে উজাড় করে দেওয়া যার ফল ভুগতে হয় হাতি সহ অন্যান্য বন্য প্রানীদের খাদ্যের অভাব পাকিস্তানের অভাব প্রজননের ক্ষেত্রে সমস্যা যার ফল সঙ্কটজনক। অনেক সময় যা ঘটে তা হল দিনের বেলায় হাতিরা পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। খুব ভোরে এবং রাতে এরা খাবার খেতে বের হয়। মাঝেমধ্যে মানুষের বাড়িঘর ভেঙে দেয় ও ফসল নষ্ট করে। তারপর মানুষ হাতিদের তাড়ানোর জন্য বোম ফাটানো ট্রেনের আওয়াজ করা বাঁহাতিদের গায়ে পড়ে মারা পাশাপাশি অনেক সময় হাতিদের কে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এই ধরনের খবর গুলি আমার মাঝেমধ্যে সংবাদপত্রের বা টেলিভিশনে শুনে থাকি। তবে বন্ধু এই বিশালকায় ডাঙার বৃহত্তম প্রাণীটি সমস্যায় পড়েছে তাদের
অস্তিত্ব সংকটে। দুষ্টু শিকারীরা চোরাকারবারী দল এবং পাচারকারী দলের কুনজরে
এরা পড়েছে। দাঁতাল হাতিদের দাঁত বাজারে ভালো দাম আছে বলে এই শিকারি
চোরাকারবারী দের দল হাতিদের মেরে ফেলে। এছাড়াও এদের সার্কাসে বন্দী
অবস্থায় থাকবার ফলে এদের আয়ু কমে যায়। এশিয়ান হাতিগুলো ট্যুরিস্টদের
আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিভিন্ন ট্যুরিস্ট এদের পিঠে চড়ে এদিক ওদিক ঘোরে।
 |
হাতির পিঠে চড়া ট্যুরিস্টদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু |
ফলস্বরূপ হাতিরা মারাত্মক যন্ত্রণার শিকার হয়। শুধু তাই নয় পৃথিবীর
বৃহত্তম এই প্রাণীটিকে মানুষ তার বশে করে নিজের সার্থসিদ্ধিতে লাগিয়েছে।
ভারী মাল বহন করতে, সার্কাস মালিক অর্থ উপার্জনে সার্কাসের মঞ্চে
দর্শকদের বিনোদন সাধনে, এছাড়াও ইতিহাসে আমরা পড়েছি রাজা-মহারাজারা,
সম্রাটরা যুদ্ধক্ষেত্রে হাতির ব্যাবহার করতেন, আবার কক্ষপণ কখনো নিজেকে
প্রতাপশালী, প্রভাবশালি প্রমান করবার জন্য হাতিদের পালন তথা পোষ মানাতেও
দেখা গিয়েছে।
সূত্র- ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
DEAR READERS, ANY SUGGETION FOR THIS BLOG AND ANY KIND OF POST, PLEASE COMMENT. BECAUSE YOUR VALUABLE COMMENT WILL BE TAKEN HAPPILY. IF YOU HAVE ANY DOUBT PLEASE LET ME KNOW.