খোলা জানালা

বছর ১৫ বাচ্চা মেয়েটি খুবই শান্ত শিষ্ট পিসির মূল্য মিস্টার নতেল এখনই নামবেন যতক্ষণ না হয় আমাকে একটু সহ্য করুন
ফ্যাশন মডেল এর উত্তরে কোন কথা খুঁজতে লাগলো যা বললে এই মুহূর্তে ভাগ্নি টিভিএস খুশি হবে আবার তার এখনি নামবে বৃষ্টি খুব একটা রাগবেন না। তার মনের মধ্যে অবশ্য এই সন্দেহটা ক্রমেই বেড়ে উঠেছে যে এরকম করে একের পর এক অপরিচিতের বাড়ি গিয়ে গিয়ে সজন্য আলাপ চলতে থাকলে তার নার্ভ অর্থাৎ স্নায়ুর আরামের ব্যাপারে বিশেষ কোনো সুরাহা হবে না যার জন্য নাকি এত কিছু।

অজপাড়াগায় এসে বাস করে দিয়ে বলে যখন সে গোছগাছ করছে তখন তার বোন বলেছিল "ওখানে গিয়ে যে কি দশা হবে সে আমি জানি এক জায়গায় খালি মুখ গুজে পড়ে থাকবি একটা কথা বলার লোক পাবিনা আর ওইভাবে মনমরা হয়ে পড়ে থাকে তোর স্নায়ুর আরও বারোটা বেজে যাবে যাগ্গে ওখানে যাদের তাদের জন্য সব চিঠি লিখে দিচ্ছে যতদূর মনে পড়ে ওদের কয়েকজন তো খুবই ভালো লোক।
এই মিসেস সাপোর্টার জন্য একটা চিঠি আছে ফেন্টন চিন্তা করছিল ইনি সেই ভালো কয়েক জনের দলে পড়বেন কিনা
বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা নেই দেখে ভাই যদি জিজ্ঞেস করল এখানে ধারা কাছে সবার সাথে আলাপ পরিচয় আছে নিশ্চয়

একদম না আসলে আমার বোন এক সময় এখানকার রেক্টরিতে থাকতো বুঝলে সেই এখানকার কয়েকজনের সাথে পরিচয় করার জন্য চিঠি লিখে দিয়েছে। বললো ফ্রামটন, শেষের দিকটা জেনেও ওষুধ টা একটু করুন হয়ে এল।

ওওও আপনি তাহলে আমার পিসির সম্পর্কে কিছুই জানেন না বুঝি শান্ত মেয়েটা কথাবার্তা চালিয়ে যায়।
ওই নাম আর ঠিকানা টুকু আগন্তুক শিকার করে সেইসঙ্গে এভাবে মিসেস স্যাপলটল বিধবা নন বোধ হয় এমন একটা পুরুষ মানুষের গন্ধ আছে।
উনার মারাত্মক ঘটনাটা ঘটেছে তো এই সব এ বছর তিনেক হল আপনার বোন চলে যাবার পরপরই বাচ্চা মেয়েটি বলে।
মারাত্মক ঘটনা শুধোয় ফ্র্যামটন, এইরকম নিস্তরঙ্গ জায়গাতেও যে আবার মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে ভাবাই যায় না।

হয়তো ভাবছেন এই অক্টোবরের বিকেলে ওই জানলাটা আমরা হাট করে খুলে রেখেছি কেন ভাই যেটা দেখাচ্ছে সেটা বেশ একটা বড়সড় ফরাসি কেতার জানালার ওপারে একটা ঘাসে ঢাকা উঠোন। ফ্র্যামটন বলল, 'না এ বছরে সময় টা তো বেশ গরম থাকে কিন্তু ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে কি এই জানালাটার কোন সম্পর্ক আছে?'
বছর তিনেক আগে ওনার ছোট দুই ভাই আর স্বামী ওই জানালা দিয়েই শিকারে বেরিয়ে আর ফেরেনি শিকারের খোঁজে জল আমার পেরোতে গিয়ে তিনজনেই বুঝতে না পেরে গভীর কাদায় পা ডুবে ডুবে যায় গরম পড়েছিল সেবার জানেন তো অন্য সময় নিরাপদ কিন্তু ঠিক এরকম সময়ে হঠাৎ বিপদজনক হয়ে ওঠে আর ওপর ওপর সেটা বোঝা যায়না। দেহগুলো আজ পর্যন্ত পাওয়া গেল না এটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। কিশোরীটির গলার শান্ত ভাবটা চলে গেছে উত্তেজনায় যেন একটু তোতলাচ্ছে সে বেচারা পিসি এখনো ভাবেন তারা কোনদিনও ফিরে আসবে ছোট্ট বাদামি স্প্যানিয়েল কুকুরটাকে সঙ্গে করে নিয়ে সে ওদের সঙ্গে ডুবে মরেছিল ওই জানালা দিয়েই তারা হেঁটে ঢুকবে যেমনটা বরাবর করত সেজন্যই প্রতি সন্ধ্যায় পুরো অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত জানালাটা খোলা রাখা হয় আমার দুঃখী পিসি কতবার যে বলেছে ওদের সেদিনের শিকারে বেরোনোর গল্পটা স্বামীর হাতে সাদা ওয়াটারপ্রুফ আর সবচেয়ে ছোট ভাই রনি পালাও কেন গো তুমি পালাও কেন? গান গেয়ে গেয়ে পিসিকে খেপাচ্ছে শিকারের উত্তেজনা পিসির সয়না বলে ও ঐরকম খেপাতো আমার না জানি না আজকের মত একেকটা শান্ত, থমথমে সন্ধেয় কেমন গা শিরশির করে মনে হয় ওরা সব জানালা দিয়ে হেঁটে ঢুকবে।

একটু শিউরে ওঠে থেমে গেলো মেয়েটা আর এই সময়ে ক্রমটন কে স্বস্তি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে নামলেন পিসি নেমে কল কল করে অনর্গল দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলেন নামতে দেরি হওয়ার জন্য।

ভেড়া আপনার সঙ্গে ভালো করে কথা-টথা বলেছে তো শুধোলেন তিনি।

ও ভালো মেয়ে খুব ভালো। বলল ফ্র্যামটন।
কিছু মনে করবেন না জানালাটা একটু খুলে রেখেছি মিসেস স্যাপলটন টগবগিয়ে বললেন স্বামী আর ভাইয়েরা স্বীকার ছেড়ে সোজা ওখান দিয়ে ঢুকবে কি না জল কাদার মধ্যে এসে গেছে কাজেই আমার বেচারা কার্পেটটার দফারফা করবে আজ আপনারা পুরুষ মানুষ তো সব ঐরকমই কি বলেন মশাই
তিনি খুব উজ্জ্বল ভাবে পাখি শিকারে কত মেহনত শীতকালে হাঁস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এসব বোঝাচ্ছেন আর ফ্র্যামটন আতঙ্কে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে সে এই বীভৎস কথাবার্তা থেকে বেরিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা চালালো খানিকটা পারলো তবে পুরোটা নয় আরেকটা জিনিস সে বুঝল কর্ত্রী কিন্তু তার সঙ্গে কথাবার্তা পুরো মনোযোগ দিচ্ছেন না তার দৃষ্টি সবসময় তাকে পেরিয়ে খোলা জানলা আর তার ওপারের ওই ঘাসের উপর দিকে চলে যাচ্ছে। ওফ্ দেখে দেখে ঠিক এই দুঃখের দিনে কি অপরিচিতের বাড়িতে আলাপ করতে আসতে হয় ভাবল সে।
ফ্র্যামটনের এই বোধ আছে যে হঠাৎ আলাপ হওয়া অপরিচিত লোকের কাছে নিজের অসুস্থতার বিচিত্র সব খুটিনাটি নিয়ে জ্ঞান অর্জন করা ভালো নয় তবু সে চালিয়ে গেল আমার পুরো বিশ্রাম নিতে হবে মানসিক উত্তেজনা চলবে না বেশি পরিশ্রম একদম নয় এসব তো ডাক্তারই এক সুরে বলছেন কিন্তু কি যে খাব না খাব সে নিয়ে আর কেউই একমত হতে পারছেন না।
পারছেন না? বললেন মিসেস স্যাপলটনএকটা হাই উঠতে যাচ্ছিল সেটাকে শেষ মুহূর্তে দমিয়ে আর তারপরই হঠাৎ উচ্চকিত হয়ে উঠলেন তবে ফ্র্যামটনের কথার উত্তরে নয়।
'এসে গেছূ, এসে গেছে, চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি চায়ের সময় হাজির আর কেমন আপাদমস্তক কাদা মেখেছো দেখো!'
ফ্র্যামটন সামান্য শিউরে উঠে ভাগ্নীর দিকে তাকাল হয়তো এটা বোঝাবার জন্য যে মেয়েটা বলছিল সেটা সে এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে দেখল মেয়েটির চোখে সোজা তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে কোন এক নামহীন আতঙ্কের তাড়নায় তার আসনে বসে বসেই তড়াক করে ঘুরল জানালার দিকে।
বাইরে তখন গাঢ় হয়ে আসছে গোধূলি তার মধ্যেই দেখা গেল ঘাসের উঠোন পেরিয়ে জানলার দিকে এগোচ্ছে তিন মূর্তি তিনজনেরই হাতে বন্দুক একজনের কাঁধে আবার জ্বলছে সাদা কোট। ক্লান্ত বাদামী স্প্যানিয়েলটাও আসছে ওদের গোড়ালি ঘেসে ঘেসে নিঃশব্দে তারা পৌঁছে গেল বাড়ির কাছাকাছি আর তারপরই আধারের মধ্যে থেকে গিয়ে উঠল এক কর্কশ যুবকন্ঠ পালাও কেন গো তুমি পালাও কেন
ফ্র্যামটন ঝাঁপিয়ে পড়ে তার টুপি আর ছড়িটা তুলেই পড়ি কি মরি দৌড়ালো ঝাপসা দেখা গেল ঘরের দরজা পেরিয়ে কাঁকর বিছানো পথ পেরিয়ে সদর দরজা পেরিয়ে অন্ধের মত ছুটছে সে রাস্তায় একটা সাইকেলের সঙ্গে নির্ঘাত সাইকেল-আরোহী নিজেকে খানা-খন্দে পড়ে বাঁচিয়ে দিত।
এসে গেছি সোনামণি সাদা বর্ষাতি কাঁধে লোকটি জানালা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল কাদালে গেছে ভালোই তবে শুকিয়ে এসেছে অনেকটাই আমরা ঢুকতেই কে যেন পালালো কে ওটা
কে এক মিস্টার নাটেল বড় বেখাপ্পা লোক মিসেস স্যাপলটন বললেন নিজের অসুখ-বিসুখ ছাড়া মুখে আর কোন কথা নেই তোমরা আসতেই দৌড় লাগালো যেন ভুত দেখেছে গুডবাই বলা নেই মাফ চাওয়া নেই।
'ওই স্প্যানিয়েলটার জন্য মনে হয়।' ভাইজি শান্তভাবে বলল, 'বলছিল ওর নাকি কুকুরে খুব ভয় একবার গঙ্গা নদীর তীরে একদল নেড়ি কুকুরের তাড়া খেয়ে ও একটা কবরে ঢুকে পড়েছিল সেখানে এক নতুন খোঁড়া কবরের মধ্যে ঢুকে ওকে রাত কাটাতে হয় বাইরে মাথার ওপর কুকুরগুলো খালি সারারাত করেছে আর গজরেছে আর ফুঁসেছে ওরকম হলে স্নায়ুর বারোটা তো বাজবেই
এ মেয়ের ওই হল গুণ চোখের পলকে গল্প বানানো।